Multidimension Desk
Photo : Shutterstock.com

২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম রাউন্ড ১০ এপ্রিল-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সব মিলিয়ে যে বারোজন প্রার্থী এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন, তারা হলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, মারিন লে পেন, জঁ-লুক মেলেনসঁ, এরিক জেমুর, ইয়ানিক জাডো, ভ্যালেরি পেক্রেস, জঁ লাসল্, ফ্যাবিয়েন রুসোঁ, অ্যান হিডালগো, নিকোলা দ্যুপোঁ-এনো, ফিলিপ পুতু এবং নাতালি আরথো।

রাত ৮টায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ২৭.৮৪% ভোট নিয়ে তালিকার শীর্ষে থাকেন, মারিন লে পেন দ্বিতীয় স্থান পান ২৩.১৫% ভোট পেয়ে। তার পরে আসেন জঁ-লুক মেলেনসঁ ২১.৯৫% ভোট নিয়ে।

ফলাফল ঘোষণার পর, ঐতিহ্যবাহী বামপন্থী নেতা লা ফ্রান্স আঁসুমিয (অদমনীয় ফ্রান্স)-এর জঁ-লুক মেলেনসঁ তার ভোটারদেরকে কোনো অবস্থাতেই মারিন লে পেনকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান । দক্ষিণপন্থী রিপাবলিকানদের প্রার্থী ভ্যালেরি পেক্রেস তার ভোটারদের কাছে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। একই আবেদন করেন সোশ্যালিস্ট পার্টির অ্যান হিডালগো এবং ইউরোপ ইকোলজি – দ্য গ্রিনস-এর ইয়ানিক জাডো। অন্যদিকে, এরিক জেমুর এবং নিকোলাস দ্যুপোঁ-এনো, উভয়ই চরম দক্ষিণপন্থী শিবিরের প্রতিনিধিত্বকারী, মেরিন লে পেনের পক্ষে তাদের সমর্থন ঘোষণা করেন।

পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৮ থেকে ২৪ বছর এবং ২৫ থেকে ৩৪ বছরের ফরাসিদের বেশিরভাগই জঁ-লুক মেলেনসঁকে ভোট দিয়েছে, যার নির্বাচনী ইশতেহার, একটি ভিন্ন বিশ্ব সম্ভব, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির উপর গুরুত্ব দিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, কাজের নূন্যতম মায়নার হার বৃদ্ধি, অবসরের বয়স ৬০-এ ফিরিয়ে আনা, সরকারী সেবা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে হাসপাতালে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাথে সাথে ফরাসী রাষ্ট্রকে সত্যিকারের গণতন্ত্র চর্চার জন্য ৬ষ্ঠ প্রজাতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব (নাগরিকদের উদ্যোগে গণভোট -RIC, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা) এবং সংবিধানে নতুন মৌলিক অধিকার (নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার, মর্যাদার সাথে মৃত্যুর অধিকার)।

২৪ এপ্রিল, ২০২২ নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ড-এ এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ৫৯% ভোট নিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং মারিন লে পেন ৪১% ভোট সংগ্রহ করেছেন। এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নব্য-উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতি, ধনীদের জন্য কর কমানো এবং অবসরের বয়স ৬২ থেকে ৬৫ তে উন্নীত করার বিরুদ্ধে জনগণের একটি বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ থাকা সত্বেও, ফরাসি ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সাধারণ ভালো-মন্দের বিচারে তিনি বিজয়ী হন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী, অভিবাসন বিরোধী, বর্ণবাদ এবং জেনোফোবিয়ার (জাতিগত ঘৃণা) উপর ভিত্তি করে মারিন লে পেনের চরম দক্ষিণপন্থী কর্মসূচি তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। যদিও ২০১৭ সালের তুলনায় দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান কমার ক্ষেত্রে মারিন লে পেনের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ফরাসি সমাজের ক্রমাগত পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হয়, যে সমাজ এখনও বহুজাতি এবং বহুসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্তির জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তাই, এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে জনগণের অসন্তোষ মোকাবেলার জন্য তার প্রথমবারের রাষ্ট্রপতি মেয়াদের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্ব বহন করতে হবে। ২০১৭ সালে তার নির্বাচনকে ফরাসী রাজনীতিতে একটি জলাবদ্ধতা হিসাবে গণ্য করা হয়। কারণ তিনি একটি নতুন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক আন্দোলন “বাম বা ডান নয়”-এর তরুণ এবং উদ্যমী নেতা হিসাবে, সেই সময়ে ফরাসি জনগণের কাছে অজানা হওয়া সত্বেও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতি হিসাবে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দ্বিতীয় মেয়াদের কর্মসূচি মূলত ফরাসি সংসদের নিম্নকক্ষের নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে যা ১২ জুন, ২০২২ (প্রথম রাউন্ড) এবং ১৯ জুন, ২০২২ (দ্বিতীয় রাউন্ড) অনুষ্ঠিত হবে । গত নির্বাচনে বাম-ডান বিভাজনকে ভেঙে তার দল ৫৭৭ টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৩০৮ টি আসন জিতে অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। কিন্তু ফরাসি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জঁ-লুক মেলেনসঁ এবং মারিন লে পেনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব অবশ্যই বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন করবে এবং এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এজেন্ডার উপর চাপ সৃষ্টি করবে।

Read More :

মাল্টিডাইমেনশন ম্যাগাজিন