মাল্টিডাইমেনশন ডেস্ক:

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রিফেক্ট (উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা)-দের সঙ্গে বৈঠকে অভিবাসন সংক্রান্ত একটি বিলের বিষয়ে কথা বলেছেন যা ২০২৩ সালের শুরুতে পেশ করা হবে।

রাষ্ট্রপ্রধানের মতে, বর্তমান নীতি “অযৌক্তিক, অকার্যকর এবং অমানবিক”। তিনি প্রস্তাব করেন যে (অভিবাসন সংক্রান্ত) পদ্ধতিগুলিকে একে অপরের থেকে আলাদা করে দেখার প্রয়োজনীয়তা আছে যাতে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হয়। “সমস্ত ধরণের বিলম্বের অভ্যাস” ছেড়ে প্রত্যেক ব্যক্তির অধিকারকে সম্মান করার জন্য আবেদনগুলি আরও দ্রুত বিবেচনা করা উচিত। এটি “যাদের অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি আছে, ভাষা এবং কাজের মাধ্যমে” তাদের একীকরণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। অর্থাৎ, তাদেরকে আরও ভালোভাবে ফরাসি ভাষা শিখতে ভাষা প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কাজের জগতে তাদের একীভূত করতে সাহায্য করা।

ফ্রান্সের ভৌগোলিক সীমানায় বিদেশীদের সংখ্যার সুষম বন্টনের জন্য “জনসংখ্যা হারাচ্ছে এমন গ্রামীণ এলাকায়” তাদেরকে পাঠানোর প্রস্তাব করেন তিনি।

শুধু তাই নয়, ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ অনিয়মিত পরিস্থিতিতে থাকা বিদেশীদের জন্য নির্বাসন নীতি শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি মনে করেন ফ্রান্স যে ভিসা প্রদানের বিষয়ে তার নীতিগুলিকে দৃঢ় করছে সে বিষয়ে বিশ্বকে “একটি স্পষ্ট বার্তা” পাঠাতে পেরেছেন। যেসব দেশের নাগরিকরা ফ্রান্সে অবৈধ অবস্থায় আছে বা জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার জন্য ফ্রান্স কর্তৃক বহিষ্কৃত হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং উন্মুক্ত ট্রাভেল পাস দেওয়ার জন্য তিনি সেই সব দেশের সহযোগিতার উপর নির্ভর করছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দাঁরমানার মতে, ইমিগ্রেশন বিলটি শরৎকালে পেশ করার কথা ছিল। আগস্টের শুরুতে এটি স্থগিত করা হয়েছিল এই বলে যে প্রথমে তাঁর মন্ত্রকের মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা হবে এবং তারপরে অক্টোবরে সংসদে বড় বিতর্ক হবে।

‘রাসেম্বলমঁ ন্যাশনাল (জাতীয় সমাবেশ)-এর প্রাক্তন সভাপতি মেরিন লে পেনের মতে অভিবাসন আসলে একটি অভিশাপ যার বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত কারণ “এটি আমাদের দেশ এবং আমাদের সমাজের দারিদ্র্য, বর্বরতা এবং জাতীয় পরিচয়ের দুর্বলতার উৎস”।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিতীয়স্থান অর্জন করা প্রার্থী “গণভোটের মাধ্যমে ফরাসিদের মতামত নিয়ে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন বন্ধ করার” প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তার দলের লক্ষ্য হল অভিবাসন এবং পারিবারিক পুনর্মিলন বন্ধ করা, শুধুমাত্র বিদেশ থেকে করা আশ্রয়ের আবেদনগুলি বিবেচনা করা, ৫ বছর ধরে টানা কাজ করার শর্তে ফরাসী জনগণ এবং বিদেশীদের জন্য সামাজিক সুবিধা সংরক্ষণ করা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক আবাসনের সুবিধার জন্য ফরাসীদের অগ্রাধিকার দেওয়া, অবৈধ অভিবাসী, কুকর্মকারী এবং বিদেশী অপরাধীদের পদ্ধতিগত বহিষ্কার এবং সেইসাথে জুস সোলি’র (একটি দেশের ভূখণ্ডে জন্মসূত্রে জাতীয়তার অধিকার) বিলুপ্তি। বিদেশী বাবা-মার ফরাসি ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণকারী বাচ্চারা ১৮ বছর বয়স হলে জাতীয়তা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে আর যখন তারা ফরাসি হওয়ার এবং ফ্রান্সে তাদের একীভূত হওয়ার ইচ্ছা দেখাবে।

রাসেম্বলমঁ ন্যাশনালের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, জর্ডান বারডেলা বলেছেন যে “আজকের ফ্রান্সে সবাই আসে এবং কেউ বাইরে যায় না”।

লা ফ্রান্স আঁসুমিয (অদমনীয় ফ্রান্স)-এর প্রতিষ্ঠাতা জঁ-লুক মেলেনসঁ অভিবাসনের প্রশ্নে আরও “মানবতাবাদী এবং বাস্তববাদী” পদ্ধতির উপর জোর দেন। তার মতে, প্রথমে নিশ্চিত করা দরকার যে বিদেশীরা তাদের মূল দেশ না ছাড়ে কারণ তাদের দেশ, তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের থেকে দূরে থাকা তাদের জন্য একটি যন্ত্রণা।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় তার প্রতিশ্রুতি ছিল অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনকে শক্তিশালী করা, অভিবাসীদের তাদের দেশ ত্যাগ করা আটকাতে অসম বাণিজ্য চুক্তির বিরোধিতা করা, প্রযুক্তি স্থানান্তর, আর্থিক ও বস্তুগত সহায়তার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন আটকানোর কাজ করা, প্রতিটি ফাইল অধ্যয়ন করার জন্য সময় নিয়ে আশ্রয়ের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান এবং পরিশেষে, ভিসা নিয়ে প্রবেশের সুবিধা প্রদান, কর্মী, শিক্ষার্থী, স্কুলে পড়াশোনা করা বাচ্চাদের বাবা-মার নিয়মিতকরন এবং দশ বছরের আবাসিক কার্ডকে রেফারেন্স রেসিডেন্স পারমিট হিসাবে গ্রহণ করা।